Saturday, May 4, 2024
spot_img
spot_img
Homeদেশনিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ডংফেং-৪১ চীনের ব্যালেস্টিক মিসাইল সারা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে ভয়াবহ...

নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ডংফেং-৪১ চীনের ব্যালেস্টিক মিসাইল সারা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে ভয়াবহ আঘাত হানবে মাত্র ৩০ মিনিটে।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ও উন্নতশীল দেশ জাতীয় সুরক্ষা বৃদ্ধির স্বার্থে পাখির চোখ করেছে ব্যালেস্টিক মিসাইলকে। আমেরিকা কয়েক বছর আগেও এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে ছিলো ঠিকই তবে, প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে চিন। কোনো আমেরিকান মিসাইল নয় বরং বর্তমানে চীনের একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ডংফেং-৪১ নিউক্লিয়ার ওভারহেড সমৃদ্ধ ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) কেই বিশ্বের সবচেয়ে ভংঙ্কর ও সর্বোচ্চ দূর পাল্লার মিসাইল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। চীন যদিও ডংফেং-৪১ আইসিবিএম মিসাইলের রেঞ্জ পনেরো হাজার কিলোমিটার বলে দাবি করে, তবে, আদপে এর সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৮,৬৯৯ মাইল বা ১৪ হাজার কিলোমিটার বলেই মনে করা হয়।

যদিও তা হলেও বর্তমানে সত্যিই চীনের ডংফেং-৪১ এর সমকক্ষ মিসাইল বিশ্বের খুবই কম দেশের কাছে আছে।

অপরদিকে আমেরিকার অপর শত্রু দেশ রাশিয়াও খুব একটা পিছিয়ে নেই। বিশ্বের সবচেয়ে দূরপাল্লার আইসিবিএম হিসেবে বিবেচনা করা হয় রাশিয়ার তৈরি ২০৫ টন ওজনের আরএস-২৮ সারমাট আইসিবিএম-কে। এখনো পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর যে কোন যুদ্ধে পুরোপুরি ভাবে নির্ভর করে এই ফাইটার বিমানের ওপরেই।যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধের দিক ঘুরিয়ে ফেলতে সক্ষম ফাইটার বিমান। সেই জন্যেই নিত্য নতুন উন্নত প্রযুক্তির ফাইটার বিমান তৈরি করতে ব্যস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।ফাইটার বিমানের বাণিজ্যে এখন বেশ রমরমা। টাল মাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে কার কাছে কোন দেশ কত ফাইটার বিমান বিক্রি করতে পারবে তা নিয়েও রীতিমতো শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। সাম্প্রতিককালে রাশিয়ার সামরিক অস্ত্র নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে ঠিকই তবে সবচেয়ে বেশি ফাইটার বিমান কিন্তু রয়েছে রাশিয়ার কাছেই। এতদিন সাগরে রাশিয়া প্রতিনিধিত্ব করলেও ফাইটার বিমানের বেশ খানিকটা কমতি ছিল এই দেশের। তবে, দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সমস্ত আলাপ আলোচনা সফল করে উন্নত প্রযুক্তির নতুন প্রজন্মের এসইউ-৫৭ সুপার স্টিলথ জেট ফাইটার অবশেষে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে রাশিয়ার বিমান বাহিনীতে। তার আগে অবশ্য রাশিয়ান বিমান বাহিনী প্রথম ব্যাচের এসইউ-৫৭ স্টিলথ জেট ফাইটার থেকে হাইপারসনিক এয়ার টু এয়ার মিসাইল ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন করবে।

হাতে এই মিসাইল এসে না পৌঁছালেও সূত্রের খবর ২০২২ সালের দিকেই সার্ভিসে চলে আসতে পারে এটি। রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আরএস-২৮ এর প্রকৃত রেঞ্জ ১৮ হাজার কিলোমিটার।

চীনের ডিএফ-৪১ আইসিবিএম ২০১৭ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে এখনো অব্দি বিশ্বের সবচেয়ে দূর পাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইল হিসাবে গণ্য হয়। এবার ২০২২ সালে রাশিয়ার আরএস-২৮ আত্মপ্রকাশ করলে সেটা হইতো চীনের মিসাইলের জায়গা কেড়ে নিতে সক্ষম হবে। তবে, আপাতত বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের এসজিএম-৩০ আইসিবিএম মিসাইলের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকায় চীনের এই ইন্টার কন্টিনেন্টাল মিসাইলটিকেই এখনো পর্যন্ত বিশ্বের যে কোনো স্থানে পারমাণবিক হামলা চালানোই সক্ষম প্রথম আইসিবিএম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।জানলে অবাক হবেন ১ মেগাটন বা ১৫০ কিলোটন ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন একাই প্রায় ১০-১২টি উচ্চ প্রযুক্তির মাল্টিপল নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড (Multiple, Independently targeted Re-entry Vehicle (MIRV) warheads) বহন করতে সক্ষম।সলিড ফুয়েলে চলিত এই মিসাইল কার্যত লং রেঞ্জের নিউক্লিয়ার মাল্টিপল ওয়ারহেড সমৃদ্ধ এক স্ট্যাটিজিক আইসিবিএম। সূত্রের খবর সার্ভিসে যোগ হওয়ার আগে এই মিসাইলের ওপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত চীন কমপক্ষে ৭ বার বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। এছাড়া, চিন ২০১৭ সালের শুরুতেই আরো ৪ টি ডিএফ-৪১ ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল ইউনিট সার্ভিস এনেছে বলেও জানা গেছে চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মির তরফ থেকে। চীন সরকার যেহেতু সেই দেশের সামরিক অস্ত্র নিয়ে বেশ গোপনীয়তা বজায় রাখে তাই কোনো কিছুই নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব না হলেও গোপন সূত্রের খবর চীনের কৌশলগত অস্ত্র ভান্ডারে এই মুহূর্তে নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বেসড বিভিন্ন পাল্লার নুন্যতম আট শতাধিক ব্যালেস্টিক মিসাইল মজুত রয়েছে।

 

দৈর্ঘ্য ২১ মিটার এবং ব্যাস ২.২৫ মিটার সম্পন্ন তিনস্তর বিশিষ্ট সলিড ফুয়েল রকেট ইঞ্জিন চালিত ডংফেং-৪১ ইন্টার কনটিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের ওজন প্রায় ৮০ টন। এই ব্যালেস্টিক মিসাইলের এক বড়ো সুবিধা হলো ভ্রাম্যমান যানবাহন চালিত মোবাইল আইসিবিএম সিস্টেম। যার ফলে কোনো স্যাটালাইটের নজর এড়িয়ে দেশের যে কোনো প্রান্তে এই মিসাইল মোতায়েন করা নেহাতই বাঁ হাতের খেলা। এটা যে ঠিক কতবড় সুবিধা আশা করি বুঝতে পারছেন।চিন ২৫ ম্যাক গতি সম্পন্ন ডিএফ-৪১ আইসিবিএমকে প্রাথমিক স্তরেই এমন ভাবে ডিজাইন করেছে যাতে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন টার্গেটে একসাথে সহজে আঘাত হানতে পারে এটি। চীনের নিজেই স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে বিশ্বের যে কোনো শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে কাজে লাগিয়েও ডিএফ-৪১ কে রোধ করা প্রায় অসম্ভব।ওয়াশিংটনে অবস্থিত সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিস’র ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্প বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতে , ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই রকম দীর্ঘ পাল্লার ব্যালেস্টিক মিশাইল আপাতত অন্য কোন দেশের কাছে নেই। অর্থাৎ চীন চাইলে এই মিসাইলের আঘাতে আমেরিকা সহ বিশ্বের যেকোন প্রান্তে ভয়াবহ আঘাত হানতে সক্ষম মাত্র 30 মিনিটের ব্যবধানেই।

উন্নতির সাথে সাথে নিত্যনতুন নানা ভয়ঙ্কর অস্ত্র সস্ত্র হাতে আসছে আধুনিক দেশগুলির। তবে, ক্ষমতার নেশায় মত্ত হয়ে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো ক্রমশ মানবজাতিকে ধ্বংসের এক অশুভ খেলায় মেতে উঠছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments