পিসি নিউজ বাংলা : মালদহ থেকে মানিকচক যাওয়ার রাজ্য সড়ক ধরে পৌঁছতে হয় লক্ষ্মীপুর গ্রামে। তবে পথে আপনাকে দাঁড়াতেই হবে। ক্লান্ত হয়ে নয়, বরং প্রাসাদোপম বাড়ি দেখে। মালিক ইংরেজবাজার ব্লকের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মাইনুল শেখ। যাঁর বাড়িটি দেখে থমকে দাঁড়াতে হয়েছিল টিম পিকে-র সদস্যদেরও।
লক্ষ্মীপুর গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায় সামান্য ফল বিক্রেতা থেকে মাইনুলের ‘রাজকীয়’ বাড়ির মালিক হওয়ার নেপথ্য কাহিনি। মাইনুল অবশ্য দাবি করেন, দলের নাম ভাঙিয়ে নয়, ব্যবসা করে রীতিমতো কালঘাম ছুটিয়ে ‘স্বপ্নের’ এই বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। কিন্তু আক্ষেপ করে তিনি জানান, “ভাল বাড়ি করেই সবার নজরে পড়ে গিয়েছি।”
ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রাম। বর্ধিষ্ণু এলাকা। এখানে যেমন ঝুপড়ি রয়েছে, তেমন রয়েছে বেশ কিছু পাকা বাড়িও। তবে মহল্লার সেরা বাড়ি কোনটি, জানতে চাইলে গ্রামের লোকজন এক কথায় দেখিয়ে দেন মাইনুলের বাড়িটি। গ্রামবাসীদের কথায়, ‘যেতে যেতে মাইনুলের বাড়ির দিকে ফিরে তাকায়নি, এমন লোক পাওয়া দুষ্কর।’’
তাঁর দলের নেতাদেরই কেউ কেউ সে কথা মেনে নিলেন।
এমনই এক তৃণমূল নেতা বলেন, “যাওয়া-আসার পথে মাইনুলের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি, আর নিজের বাড়ির কথা ভাবি মনে মনে।”
কেমন সেই বাড়ি?
বাড়িতে ঢোকার দরজা যেন বিশাল তোরণ। ভিতরে ঢুকলেই মাঠের মতো কংক্রিটের উঠোন। একই চৌহদ্দির মধ্যে পরপর দোতলা ও তিনতলা দু’টি বাড়ি। বাড়ির ভিতরে একাধিক বাতানুকূল যন্ত্র। এখানেই শেষ নয়। এছাড়াও গ্যারেজে রয়েছে এসইউভি গাড়ি, দু’টি মোটর সাইকেল। বাড়ির পাশেই মাইনুলের রড, বালি, সিমেন্টের দোকান। একটি ট্রাক্টরও রয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক আগে এখানেই পূর্ত দফতরের জমিতে ছিল একাধিক ঝুপড়ি। আর সেই ঝুপড়িতেই থাকতেন মাইনুলও। তাঁর বাবা সুবিরুদ্দিন শেখ ফেরিওয়ালার কাজ করতেন। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে মাইনুলই বড়। অর্থের অভাবে পঞ্চম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা হয়নি বলে মাইনুল নিজেই জানিয়েছিলেন। এক সময় তিনি বাজারে ফলও বেচতেন।
কিন্ত কী ভাবে এই আমূল পরিবর্তন সম্ভব হল?
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “ফল বিক্রির সময়ই আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তখন আমের ব্যবসা করতাম। সেখান থেকেই জমি কেনাবেচার কাজে সহযোগিতা করতে শুরু করি। এখন জমি কেনাবেচার পাশাপাশি নিজের দোকানও আছে।”
অন্যদিকে রাজনীতি বিষয়ে তার মন্তব্য, “২০১৩ সাল থেকে তৃণমূলের কর্মী হিসাবে কাজ করি। ২০১৮ সালে দল পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট দেয়। মানুষের আশীর্বাদে ভোটে আমি জয়ী হয়েছি।’’
তবে সত্যি মাইনুলের উত্থান কি এতটাই সরলরেখায়?
স্থানীয়দের দাবি, জমি দখল থেকে পুকুর ভরাটের মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্ত জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের হাত আছে তাঁর মাথার উপরে। অভিযোগ, বেশ কয়েক জন পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে মাইনুলের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
বিজেপির দক্ষিণ মালদহের সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “মানুষের টাকা লুট করে তৃণমূলের অনেক নেতাই নিজেদের সম্পত্তি বাড়িয়েছেন।”
মাইনুল অবশ্য এসব দাবি উড়িয়ে বলেন, “লকডাউনে পাঁচ লক্ষ টাকার চালই বিলি করেছি। ইদ উপলক্ষে নিয়ম করে পোশাক বিলি করছি। মানুষের টাকা লুটের কোনও প্রশ্নই নেই।”
মাইনুলের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, “ব্যবসা করে কেউ বাড়ি এমন বানাতেই পারেন।”