পিসি নিউজ বাংলা : আর মাস কয়েকের অপেক্ষা মাত্র। এরপরই লন্ডনের ধাঁচে সেজে উঠবে কলকাতা। ঠিক যেমনটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হতে চলেছে। বদলাচ্ছে যানবাহনের ধরনও। শহর কলকাতায় এখন আর ঐতিহ্যবাহী ট্রামের সেই ঘন্টা আর শোনা যায় না। নানা কারণে ট্রাম তার পথ হারিয়ে আজ ইতিহাসের পাতায় জায়গা পেয়েছে। কিন্তু আজও কলকাতার মানুষের কাছে নস্টালজিক এই ট্রাম। দু’এক জায়গায় তা দেখা যায় বটে।
এই পরিস্থিতিতে অভিনব পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। ট্রাম রুটেই চালানো হবে আধুনিক ট্রলি বাস। ট্রামের বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে চলবে বাস। লন্ডনের মতো এবার কলকাতার রাস্তায় চলবে ট্রলি বাস।
জানা গিয়েছে, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ই-বাস, ই-অটোর পাশাপাশি চার্জিং ঝামেলা এড়াতে ট্রলি বাস নামানোর চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে শুক্রবার পরিবহণ দফতরের আধিকারিক, কলকাতা পুর কমিশনার-সহ অন্যান্য আধিকারিক এবং কলকাতার পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিবহনমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এদিনের বৈঠকে ই-বাস নির্মাণকারী, বাসের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ কর্পোরেশন (ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন, ডব্লিউবিটিসি) এই ট্রলি বাস চালানো শুরু করবে। বৈঠক শেষে ফিরহাদ হাকিম জানান, জ্বালানির ক্রমাগত দাম বাড়ছে। তাই ই-বাস, ই-অটোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ই-বাসের সরবরাহ ঠিক নেই। চার্জিং স্টেশনও সব জায়গায় নেই। তাই ট্রলি বাস আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রলি বাস মহানগরের রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা চলছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল হলে সেটি বাড়ানোর কথা ভাবা হবে।
এই ট্রলি বাসে সুবিধা হল এটি তুলনামূলক দ্রুতগতিতে চলে। এই বাস ইলেকট্রিক ছাড়াও ব্যাটারি দিয়ে চলে। এটি যখন বিদ্যুতের সাহায্যে চলবে তখন ব্যাটারি চার্জ হয়ে যাবে। তারপর সেটি ব্যাটারিতে চলবে। থাকে ওয়াইফাই। ট্রলি বাসের আরেক নাম ট্র্যাকলেস ট্রলি। রবারের টায়ারে ভরসা করে এবং দু’টি ট্রলি খুঁটির সাহায্যে বিদ্যুৎ টেনে চলতে পারে এই ট্রলি বাস। দেখতে ট্রামের মতোই। তবে চাকা হবে সাধারণ বাসের মতোই টায়ারের। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে এই ট্রলিবাস কলকাতায় আনার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। জানা গিয়েছে, প্রথম দফার ট্রলি বাসগুলি সরবরাহ করবে ইউক্রেনের একটি কোম্পানি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে লন্ডন, বাকিংহাম, নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা, ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলির বড় বড় শহরে ট্রলি বাস চলে। প্রথমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে বসার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতাকে লন্ডন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা করেছেন। ইতিমধ্যেই গঙ্গার বিস্তীর্ণ তীর থেকে শুরু করে ত্রিফলা আলো দিয়ে সমগ্র কলকাতাকে নীল-সাদা আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পার্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়ন করেছেন। এবার মহানগরের রাস্তায় ট্রলি বাস চালু হলে লন্ডন হওয়ার পথে কলকাতা যে আরও একধাপ এগিয়ে, তা বলা যেতেই পারে।