অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :-
________________________
বিপ্লব তার প্রথম সারির সন্তানদের গ্ৰাস করে নেয়, এরকমই একটি আপ্ত বাক্য শোনা যায়।তা অতি নিমর্মভাবেই হয়ে থাকে। তবুও ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম লেখা থাকে না। শুধু কিছু মানুষের স্মৃতিতে তাঁরা বেঁচে থাকেন।আর এই বিস্মৃতির মধ্য দিয়েই তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকু হয়তো বা পেয়ে থাকেন।এমনই এক বিস্মৃত প্রায় – বীর – বিপ্লবী হলেন , হাওড়ার আমতা থানার অন্তর্গত রসপুর নামক এক স্বল্পক্ষ্যাত গ্ৰামের শ্রীশচন্দ্র(হাবু) মিত্র।
শুধু একটি স্মৃতি ফলক আর আগাছা আবৃত জম্মভিটাটুকু ছাড়া তাঁর বিশেষ কিছু স্মৃতি চিহ্ন আজ আর অবশিষ্ট নেই। ইতিহাসের পাতায় এই অমর বিপ্লবীকে সেভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় নি।এটি আমাদের অপরাধ।যে জাতি তার ইতিহাসের মহান স্রস্টাদের ব্যাপারে বিস্মৃত হয়, সে জাতি কখন ও তার সত্তার প্রতি সুবিচার করতে পারে না।
কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র ‘পথের দাবি ‘ তে সব্যসাচী এক জায়গায় বলেছেন,’আমার সামনে দু’টি পথমাত্র খোলা আছে।এক ‘মৃত্যু’ , দ্বিতীয় ‘ ভারতের স্বাধীনতা ‘ । স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী দলের মধ্যে বিশেষ ভাবে সক্রিয় ছিলেন ব্যারিস্টার পি, মিত্র -র ‘ অনুশীলন সমিতি ‘ , যতীন মুখোপাধ্যায় ( বাঘা যতীন) -র নেতৃত্বে ‘ যুগান্তর দল ‘, বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় -র নেতৃত্বাধীন ‘ আত্নোন্নতি সমিতি ‘, এবং ঢাকার হেমচন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠিত ‘মুক্তি সংঘ” (পরে বি ভি নামে ক্ষ্যাত)।
১৯১৪ সালে জুলাই মাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।৪ ঠা আগস্ট ব্রিটেন যুদ্ধ ঘোষণা করল জার্মানির বিরুদ্ধে।বিপ্লবী দলগুলি তৎপর হয়ে উঠল। ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত আয়োজন চলিতে থাকে।সৈন্যদের ব্যারাকে ইংরাজ বিদ্বেষ ছড়াইতে থাকে।। বাংলা দেশ ও বিপ্লবী দল গুলি সচেষ্ট হন।
পুরাতন বিপ্লবীদের স্মৃতি বর্তমানদের প্রত্যেকের হৃদয় মন্দিরে সত্যকার স্থান লাভ করিবে এবং মন্দিরের ললাটে সোনার অক্ষরে লিখিত থাকবে। পুরাতন যুগের কর্ম -পদ্ধতি নব পরিকল্পিত পর্যায়ের কর্মধারায় গণ – বিপ্লবকে সুষ্ঠ, সবল ও সার্থক করিয়া তুলিবে।শ্রীশচন্দ্র মিত্র ওরফে ‘হাবু ‘ -র দুঃসাহসের প্রতি শ্রদ্ধা না করিয়া কেহ পারে না। সেই পূণ্য স্মৃতি আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে সহায়তা করিয়াছে করিবে।
পরিতাপের বিষয় ‘হাবু ‘ মিত্র -র আত্নত্যাগ সরকারি ভাবে যেমন উপেক্ষিত তেমনি হাওড়া জেলা প্রশাসন, স্থানীয় আমতা প্রশাসন থেকেও উপেক্ষিত থেকে গেছে বলে রসপুর গ্ৰামের বাসিন্দাদের অভিযোগ।
১৯০০ খ্রীষ্টাব্দ হইতে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত যে সকল বাঙালি যুবক বিপ্লবী সমিতি ও সশস্ত্র বিপ্লব আন্দোলন করেন তাহা দিগের মধ্যে শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘হাবু’ মিত্র – র নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। হাওড়া জেলার আমতা থানার রসপুর গ্ৰাম নিবাসী জমিদার শরৎচন্দ্র মিত্র ও সরোজিনী দেবীর ৩টি কন্যা ও ২ টি পুত্র ছিল।জ্যোষ্ঠ পুত্র শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘হাবু ‘ রসপুর গ্ৰামে জম্মগ্ৰহণ করেন ১৮৯০ মতান্তরে ১৮৮৭ সালে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ২৬ শে আগষ্ট দিনটি একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন।১৯১৪ সালের ২৬ শে আগষ্ট রডা অস্ত্র কোম্পানির অস্ত্র লুঠ হয়। এধরনের অস্ত্র লুন্ঠনের ক্ষেত্রে এটি প্রথম প্রয়াস ও প্রায় সফল প্রয়াস।রডা কোম্পানির অস্ত্র লুন্ঠনের পরিকল্পনা ও অস্ত্র লুন্ঠনের মূল নায়ক ছিলেন হাওড়া জেলার আমতা থানার রসপুর গ্ৰামের শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘হাবু’ মিত্র।
লুন্ঠিত হয়েছিল ৫০ টি মাউজার পিস্তল,৫০ টি অতিরিক্ত স্প্রিং এবং ৫০ টি পিস্তলের খাপ – যার সাহায্যে ঐ পিস্তল গুলিকে রাইফেলের মত করে ব্যবহার করা যায়, আর ৫০ রাউন্ড কার্তুজ।
রডা অস্ত্র লুন্ঠনের পর শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্র আর ঘরে ফেরেনি। পুলিশের গুলিতে অথবা অন্য কোন ভাবে তিনি নিঃসন্দেহে মারা পরেছিলেন।এই নিহত হওয়া কি স্বাধীনতার জন্য হওয়া নয়? স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র লুন্ঠন করে বিপ্লবীদের হাতে পৌঁছে দিয়ে সাময়িক অন্তরালে থাকা অবস্থায় চিরঅবলুপ্তি , অজানার রাজ্যে মহাপ্রস্থান ,এতো স্বাধীনতার জন্যই জীবন উৎসর্গ।’হাবু ‘ আসলে ভারতের সেই স্বাধীনতা আনতে চিরকালের জন্য নিরুদ্দেশে গেছেন – যে স্বাধীনতা উচ্চ – নীচ ভেদাভেদ থেকে মুক্ত,যে স্বাধীনতা ধর্মীয় হানাহানি থেকে মুক্ত,মে স্বাধীনতা ক্ষমতার দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্ত,যে স্বাধীনতা স্বজন পোষন লুটেরাদের হাত থেকে মুক্ত।পরমাকাঙ্খিত সেই স্বাধীনতার সন্ধানেই রহনা দিয়েছেন ‘হাবু ‘ মিত্র।এ যাত্রা হারিয়ে যাওয়া নয়,এ হল স্বপ্নের সন্ধানে রহনা দেওয়া।
স্বাধীনতার পুজারী শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘হাবু’ মিত্র দেশে স্বাধীনতার বিপ্লবের জন্য অস্ত্র -শস্ত্র সংগ্ৰহ করেছিলেন।বাংলায় বিপ্লবী বিভিন্ন দলের মিলন ক্ষেত্র প্রস্তুত হল।ওই সময় বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় সকল বিপ্লবী দলকে বৈঠকে আহ্বান জানালেন। সেই বৈঠকে যতীন মুখোপাধ্যায় ( বাঘা যতীন) , বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় বিপ্লবী দলের নেতা নির্বাচিত হলেন। তাঁরা সক্রিয় সশস্ত্র বিপ্লবের আন্দোলন ঘোষণা করলেন। বিপ্লবী দলের কাজ শুরু হল। কলকাতার গার্ডেন রীচে বার্ণ কোম্পানির মিল – এ ১৮ হাজার টাকা যাচ্ছিল,তা লুঠ হল।বেলেঘাটা র চালের গুদামে ২০ হাজার টাকা লুঠ হয়। বিপ্লবী দল উত্তর কলকাতার হেদুয়ার মোড়ে সরকারি গুপ্ত বিভাগের পুলিশ কর্মচারী সুরেন বন্দোপাধ্যায়কে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ইন্সপেক্টর মধুসূদন ভট্টাচার্য কে মেডিক্যাল কলেজের সামনে পুলি লেনের কাছে গুলি করে মারে।যতীন্দ্র মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) বালেশ্বরে গেলেন রডা কোম্পানির লুঠের অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে জার্মান থেকে প্রেরিত জাহাজের অস্ত্র -শস্ত্র নামাতে।১৯১৫ সালের ৯ ই সেপ্টেম্বরে বালেশ্বরের বুড়ি বালামের তীরে যতীন মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) ও তাঁর দুর্ধর্ষ সতীর্থবৃন্দ মাউজার পিস্তল নিয়ে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
১৯৩০ সালে ৮ ই ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করলেন বিনয় বসু, দীনেশ গুপ্ত,বাদল গুপ্ত ওই অলিন্দ যুদ্ধে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা ও ওই লুন্ঠিত হওয়া রডা কোম্পানির মাউজার পিস্তল।১৯৩২ সালে ২৯ অক্টোবর বিম দাশগুপ্ত ক্লাইভ স্ট্রিটের গিলওর্স হাউসে ঢুকে ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ভিলিয়ার্স -কে ও ওই লুন্ঠিত হওয়া মাউজার পিস্তল দিয়ে গুলি করেন ।রডা অস্ত্র লুন্ঠনের একটি মাউজার পিস্তল ব্যবহার করতেন রাসবিহারী বসু। তিনি যখন জাপানে যান তখন পিস্তলটি শচীন্দ্রনাথ সান্যালকে দেন।শচীন্দ্রনাথ সান্যাল পরবর্তী সময়ে ওই পিস্তলটি স্বাধীনতা সংগ্ৰামী গিরিজা বাবুকে তা দেন।রডা কোম্পানির অস্ত্র লুন্ঠনের পর অনুষ্ঠিত ৫৪ টি নরহত্যা ও তার চেষ্টায় মাউজার পিস্তল ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই অস্ত্র লুন্ঠনের অন্যতম নায়ক শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্র এর জন্য বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব পান নি। মানুষ জানেই না এত বড় একটি ঘটনার কৃতিত্ব আসলে কার ।
পরিতাপের বিষয় শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্র – আত্নত্যাগ সরকারি ভাবে যেমন উপেক্ষিত তেমনি হাওড়া জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন থেকে ও উপেক্ষিত থেকে গেছেন। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক – শিক্ষিকা,ছাত্র-ছাত্রীদের ও কাছে শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্র উপেক্ষিত ও অবহেলিত থেকে গেছেন।
স্বাধীনতা লাভের পর শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্রের পৈতৃক ভূমির উপর তাঁর স্মৃতিতে তদানীন্তন ইউনিয়ন বোর্ডের সহায়তায় গ্ৰামবাসীবৃন্দ একটি বেদী নির্মাণ করেছিলেন। এতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন তারাপদ প্রামাণিক। বর্তমানে সেই বেদীর কোনো ও অস্তিত্বই নেই।বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ , বাস্তুভিটা ও দখল হয়ে গেছে।
স্বাধীনতার পর স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের ইতিহাস লেখার সময় আমতা থানার সোমেশ্বর গ্ৰামের আর এক স্বাধীনতা সংগ্ৰামী ভোলানাথ মাল লক্ষ্য করলেন যে শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্র -র নাম লিখিত হলেও তাঁর জম্মস্থান বহুবাজার এবং ওখানকার ছেলে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি আমতা থানার রসপুর গ্ৰামে জম্মগ্ৰহণ করেছেন এবং এখানকার ছেলে তা স্বীকৃতি দেবার জন্য ভোলানাথ মাল ৪ /৪ /১৯৪৮ সালে আত্নোন্নতি সমিতির নেতা বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় কে রসপুর গ্ৰামে নিয়ে আসেন এবং শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্র কে রসপুরের ছেলে বলে ঘোষণা করেন।সে সময় যে স্মৃতি রক্ষা কমিটি করেন তার সভাপতি ছিলেন ভোলানাথ মাল এবং সম্পাদক ছিলেন নীরদ বরণ দে। পরবর্তী সময়ে ৪/৪/১৯৫৬ তারিখে আরও এক বিপ্লবী যিনি চট্রগ্ৰাম বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মহেন্দ্র নাথ চৌধুরী রসপুর গ্ৰামে আসেন এবং এ সম্বন্ধে এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেন।সে সময় সভার আহ্বায়ক ছিলেন পাঁচু গোপাল রায়।শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্র -র বাড়ির কাছে যে স্মৃতি মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সেই স্মৃতি মঞ্চের উদ্ধোধক ছিলেন বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়।পরে ১৯৮৩ সালে রসপুর পিপলস্ লাইব্রেরীর সামনে নির্মিত শ্রীশচন্দ্র ওরফে ‘ হাবু ‘ মিত্র -র স্মৃতি মঞ্চের উদ্ধোধক ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্ৰামী দুঃখ হরণ ঠাকুর চক্রবর্তী।এটি তৈরী হয় সাধারণ মানুষের প্রচেষ্টায়। পিপলস্ লাইব্রেরী ও শ্রীশচন্দ্র ( হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি এর রক্ষনাবেক্ষণ করে। ইউনিয়ন বোর্ডের কোনো ও ভূমিকা নেই।
১৯৮৩ সালে রসপুর পিপলস্ লাইব্রেরীর উদ্যোগে গঠিত হয় বিপ্লবী শ্রীশ চন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি।ওই বছর ২৬ শে আগষ্ট রডা অস্ত্র লুন্ঠনের ৭০ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রসপুর পিপলস্ লাইব্রেরীর পাশে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করে বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি।যা এখন সংস্কারের প্রয়োজন। সেই সময়েই পি ডব্লু ডি রাস্তার রামকৃষ্ণ কাঁড়ার এর বাড়ির নামার সামনে থেকে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র -র বাড়ি যাওয়ার রাস্তার নামকরণ করা হয় ‘ শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র সরণী ‘ । দামোদর নদের বাঁধের পাশে ওই স্মরণ বেদিতে তাঁর জম্ম তারিখ উল্লেখ করা যায় নি। কলকাতার মলঙ্গা লেনে তিনজন স্বাধীনতা সংগ্ৰামীর স্মৃতি মঞ্চ আছে। সেখানে অনুকূল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, হরিদাস দত্তর মূর্তির সঙ্গে তাঁদের জম্ম -মৃত্যু তারিখের উল্লেখ আছে।শ্রীশচন্দ্র (হাবু) -র স্মৃতি ফলক থাকলেও তাঁর কোনো স্ট্যাচু নেই, নেই জম্ম – মৃত্যুর তারিখ।কারণ তাঁর সঠিক জম্ম – মৃত্যুর তারিখ যেমন পাওয়া যায় নি, তেমনি পাওয়া যায় নি তাঁর কোনো ছবি।
কয়েক বছর পর পি ডব্লু ডি রাস্তা টি পাকা রাস্তা করার সময় ‘শ্রীশচন্দ্র( হাবু) মিত্র স্মৃতি সরণী ‘ ফলক টি তুলে দেওয়া হয়।এর কোনো ও প্রতিবাদ করেন নি তৎকালীন রসপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলের (কংগ্রেস) নেতা জয়ন্ত পল্ল্যে।২০১১ সালে রাজ্যে শাসন ক্ষমতা পরিবর্তন হয়।২০১৩ সালে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে রসপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে আসে।উপ – প্রধান হন জয়ন্ত পল্ল্যে।গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জয়লাভ করে জয়ন্ত পল্ল্যে উপ – প্রধান হন। কিন্তু তিনি সেই স্মৃতি ফলকের পুনঃ প্রতিষ্ঠার কোনো ও উদ্যোগ নেননি এখন ও পর্যন্ত।
আমতা ১ নং ব্লকের দামোদর নদের তীরে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি পরিবার প্রতি বছর বন্যার কবলে পড়ে। তাঁরা তখন আশ্রয় নিতে বাধ্য হত স্থানীয় রসপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বেশ কয়েক বছর আগে আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে রসপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার তৈরী হয়েছে। সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ওই রেসকিউ সেন্টার টি ” শ্রীশচন্দ্র ( হাবু) মিত্র ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার ” নামকরণ করা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় রেসকিউ সেন্টার টি তৈরী করা হলে ও সেন্টার টি স্বাধীনতা সংগ্ৰামী শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র নামকরণ করা হয় নি।
শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি -র পক্ষ থেকে উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজী -কে ৭ দফা দাবি সম্বলিত সনদ পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।
দাবি সনদে বলা হয়েছে –
১/ স্বাধীনতা সংগ্ৰামী শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র -র অবদান ছড়িয়ে পড়ুক সারা বাংলা তথা ভারতবর্ষে । সরকারি ভাবে তার প্রস্তুতি নেওয়ার।
২/ সংরক্ষণ করা হোক শ্রীশচন্দ্র( হাবু) মিত্র -র জম্ম ভিটা।
৩/ ঐ জম্ম ভিটায় স্মারক স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ সহ সংগ্ৰহশালা গড়ার।
৪/ রসপুর পিপলস্ লাইব্রেরীর সামনে ১৯৮৩ সালে শ্রীশচন্দ্র( হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভের সংস্কার।
৫/ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র -র জীবনী ও স্বাধীনতা সংগ্ৰামে তাঁর অবদান।
৬/ পি ডব্লু ডি রাস্তার রামকৃষ্ণ কাঁড়ার এর বাড়ির নামার সামনে থেকে শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র -র বাড়ি যাওয়ার রাস্তার নামকরণ ” শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র সরণী” ফলক যেটি ১৯৮৩ সালে বসানো হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে পাকা রাস্তা হওয়ার সময়ে সেই ফলক তুলে দেওয়া হয় – সেই ফলকের পুনঃ প্রতিষ্ঠার।
৭ / আমতা থেকে বালিচক পর্যন্ত দামোদর নদের পূর্ব বাঁধের নাম করণ করা হোক
” শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র
সরণী ” ।
শ্রীশচন্দ্র (হাবু) মিত্র স্মৃতি রক্ষা সমিতি -র সম্পাদক অসিম কুমার মিত্র জানালেন এই দাবি সনদ উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজী কে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে কার্যকরী ভূমিকা গ্ৰহণের জন্য পাঠানো হবে।
#