ফের রাজ্যের কয়েক লক্ষ কৃষক বঞ্চিত হলেন কেন্দ্রীয় প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী কিষান নিধির (Prime Minister Kishan Nidhi) আর্থিক সহায়তা থেকে। নয়া কৃষকবন্ধু প্রকল্পে যখন রাজ্য সরকার কৃষকদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুন করে দিয়েছে, সেখানে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাঁদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুললেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
সোমবার দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার ও পীযুষ গোয়েলের সঙ্গে এক ভারচুয়াল আলোচনায় এই তথ্য জানার পর তীব্র প্রতিবাদ করেন শোভনদেব।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় নিয়ম অনুযায়ী এই প্রকল্পে টাকা পাওয়ার জন্য রাজে্যর ৪৬.০২ লক্ষ কৃষকের নাম নির্দিষ্ট পোর্টালে নথিভুক্ত করা হয়। যার মধ্যে ৩৮.৫১ লক্ষ কৃষককে টাকা দেওয়ার জন্য চিহ্নিতও করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ২৩.৭৭ লক্ষ কৃষককেই এই টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে কেন্দ্র জানিয়েছে। অর্থাত্ প্রায় ১৫ লক্ষ কৃষক (Farmers) এই দফায় প্রধানমন্ত্রী কিষান নিধি থেকে বঞ্চিত হলেন। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘বিভিন্ন কারনে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার কৃষকদের পাশে রয়েছে। কৃষকবন্ধুর টাকা যেমন তাঁরা পাচ্ছেন, তেমনই শস্যবিমা-সহ আরও একাধিক প্রকল্পের সুবিধাও পাচ্ছেন রাজ্যের কৃষকরা।’
এদিন প্রধানমন্ত্রী কিষান নিধি, কিষান ক্রেডিট কার্ড, কৃষকদের ডেটাবেস তৈরি করা, ডাল ও ভোজ্যতেলে স্বনির্ভরতা-সহ বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান শোভনদেব। সেখানে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রীরা ছিলেন। ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আলোচনাসভায় প্রথমেই কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রী তাঁদের বক্তব্য রাখেন। কেবলমাত্র উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া বাকি কাউকেই সেভাবে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ শোভনদেবের।
তিনি বলেন, ‘রাজ্যে খাদ্য শস্য ও শাকসবজি চাহিদা মেটানোর পরও উদ্বৃত্ত। এমন কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যা কৃষকদের উপযোগী। যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৮ সাল থেকে কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার চেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে রাজ্যের কৃষকদের আয় তিনগুন হয়ে গিয়েছে।’ রাজ্যে শস্য নিবিড়তা ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১৭৭ শতাংশ। সেখানে ২০১৯-২০ তে তা বেড়ে হয়েছে ১৯০ শতাংশ। কৃষি ক্ষেত্রে বাজেটও ২০১০-১১ সালের ১৮০.৭০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫৮৬০ কোটি টাকা করা হয়েছে বলে জানান শোভনদেব। খাদ্যশস্য ২০১০-১১ সালে ১৪৮.১ লক্ষ মেট্রিক টনের তুলনায় ২০১৯-২০ সালে হয়েছে ২ লক্ষ মেট্রিক টন। বাংলার কৃষকদের শস্যবিমার ১০০ শতাংশ কিস্তিই দেয় রাজ্য সরকার।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ লক্ষ কৃষক সাহায্য পেয়েছেন বিভিন্ন প্রকল্পে। তাঁদের জমি ও অন্যান্য তথ্যও আধার কার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যে তৈলবীজ চাষের উপযোগী আবহাওয়া নেই। তা সত্ত্বেও যদি কেন্দ্রীয় ভরতুকি মেলে, তাহলে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া বা উত্তরবঙ্গের কোনও জেলায় তৈলবীজ চাষের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের জানিয়েছেন শোভনদেব।