দীর্ঘ 16 বছর ঘরটার দরজা খোলেনি। জানলা দিয়ে যতটুকু নজরে পড়ে ততটাই পৃথিবী পূর্ব বর্ধমান জেলার গ্রামের সবিতার।
মুক্তির স্বাদ পেতে মাঝে মধ্যে আর্তনাদ করেন তিনি। কিন্তু তাতে মন গলেনা কারোরই। আউসগ্রাম 1 নম্বর ব্লকের বড়া বড়াইগ্রামের বাসিন্দা সবিতা ঘোষ। বহু বছর আগে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে, বাবা শিবপ্রসাদ ঘোষ মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে।
জনস্বার্থে প্রচারিত
শিবপ্রসাদ বাবুর দুই বিয়ে, তার প্রথম পক্ষের এক ছেলে, দুই মেয়ে। তাদের মধ্যে ছোট সবিতা, সেখানেই থাকেন তার দাদা, বৌদি ও ভাইজি। প্রতিবেশীরা জানান, দাদা উজ্জ্বল ঘোষ একই বাড়িতে থাকলেও তিনি খেতে পর্যন্ত দেন না বোনকে। সবিতার সৎবোন কাবেরীদেবী নিয়ম করে দুবার খাবার দিয়ে যান জানলা দিয়ে। কাবেরীদেবী বলেন, দিদি পড়াশোনায় ভালো ছিলেন, নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভালো নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন।
তারপর কোনো এক অজানা কারণে মানসিক ভারসাম্য হারায়। সেই থেকে দাদা ওকে ঘরে আটকে রেখেছে। ঘরের চাবি দাদার কাছে থাকে, সেভাবে দিদির চিকিৎসাও করানো হয়নি। স্থানীয়দের সাহায্যে খবর পাই এস এস ইউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির কার্যকরী সদস্য প্রতাপ চুনারী মহাশয়।
প্রতাপ বাবু, এই বিষয়ে আউসগ্রাম 1 নম্বর বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের কাছে ফোনের মাধ্যমে জানান এবং বিষয়টি তদন্ত করে, যে বা যারা আটকে রেখেছে, তাদের অতিরক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ও মেয়েটিকে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতাপ বাবু বলেন, দাদা হয়ে বোনের সঙ্গে যে এই ধরনের আচরণ এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না, এর তীব্র প্রতিবাদ না করলে, আগামী দিনে মানব সভ্যতার পতন ঘটতে শুরু করবে, দাদা হয়ে উনার উচিত ছিল, বোনের নিয়মিত চিকিৎসা করা, চিকিৎসা করার টাকা না থাকলেও সরকারের দ্বারস্থ হওয়া বা এলাকাবাসীর দ্বারস্থ হওয়া, কিন্তু সে কিছুই করেনি, এই জঘন্য অপরাধের কোন ক্ষমা নেই, খুব তাড়াতাড়ি এর ব্যবস্থা না হলে, বর্ধমান জেলায় আমাদের সংগঠনের হেড অফিস, প্রয়োজনে, এস এস হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সঙ্গীতা চক্রবর্তীর সহযোগিতায়, বোনের সঙ্গে দাদার যে নির্মম অত্যাচারের কথা আমরা তুলে ধরব দিল্লি মানবাধিকার কমিশনে।
ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার(BDO)অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি জানা নেই, যদি গ্রাম থেকে কেউ জানান তাহলে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।