পুলিশ সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে পুলিশ। মাদক ট্যাবলেটের পাচার এখন পুলিশের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিপুর পুলিশের অফিসার এবং রাজ্য পুলিশের সিআইডিরা পৃথকভাবে অভিযান চালায়। তারপর সেখান থেকে বহরমপুর এবং সামশেরগঞ্জ থেকে গত চার দিনে প্রায় এক লক্ষ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছেন । এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএসএফের এক কর্তা বলেন, ‘গত কয়েক বছর আগেও হেরোইনের সঙ্গে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণে ফেনসিডিল সিরাপ পাচার করা হত। কিন্তু বর্তমানে ফেনসিডিলের পরিবর্তে ইয়াবা ট্যাবলেটের চোরাচালান বহুগুণ বেড়ে গেছে।’
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘ক্রেজি মেডিসিন’ বা পার্টি ড্রাগ হিসেবে পরিচিত ইয়াবা যুব সম্প্রদায়ের কাছে এক আকর্ষণীয় মাদক। এই মাদক পাচার করে অনেক মুনাফা লাভ করছে পাচারকারীরা আর তাই পাচারের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে । এই মাদক সহজেই লুকিয়ে রাখা যায়। এই ট্যাবলেট তৈরি হয় মূলত
ক্যাফিন ও মেথামফেটামিন নামক নিষিদ্ধ ওষুধ দিয়ে। ঘোড়াদের রেসে নামানোর আগে এই ওষুধ খাওয়ানো হত। যাতে তারা উত্তেজিত হয়, এবং খুব জোরে দৌড়াতে পারে।
সূত্রের খবর , পশ্চিমবঙ্গে এই মাদক তৈরি হয় না। উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্য ও মায়ানমার থেকে পাচার হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ও বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এখন মায়ানমার থেকে মণিপুর বা মিজোরাম হয়ে এই ট্যাবলেট ভারতে প্রবেশ করে। তারপর কনসাইনমেন্ট’ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে প্রবেশ করে। পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, ‘মুর্শিদাবাদের বুক চিড়ে চলে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে কাজ করে । মূলত এই পথ ধরেই মণিপুর, মিজোরাম থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট কলকাতা ও অন্য জেলাগুলিতে পাচার হয়।’ কোভিডের জন্য ট্রেন বন্ধ থাকায় জাতীয় সড়ক দিয়ে মাদক পাচারের পরিমাণ বর্তমানে বেড়েছে।
সূত্রের খবর, মেথামফেটামিন নামক ওষুধটি তৈরি হয় মায়ানমারে। ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির ক্ষেত্রে এই ওষুধটি গুরুত্বপূর্ণ। এক পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের দাম ৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে মাদক পাচারকারীরা এই ট্যাবলেট২০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস দরে বিক্রি করে থাকে।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি ধর্মে মদ খাওয়া নিশিদ্ধ হতেই সেই ধর্মের মানুষরা এই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। হেরোইনের এর থেকে ইয়াবার দাম কম। তাই সবাই এই নেশায় আসক্ত হচ্ছেন। এই ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হল চিবিয়ে খাওয়া, কিন্তু অনেকে সিগারেটের রাংতার ভিতরে ঢুকিয়ে খেয়ে থাকেন। নিয়মিত ইয়াবা ট্যাবলেটের নেশা করলে কিডনি, হার্ট, লিভার এবং মস্তিষ্কের গুরুতর ক্ষতি হয় বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।