কাবুল-সহ বিভিন্ন জায়গায় উত্সব তালিবানদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকা তথা ন্যাটো বাহিনীর আফগানিস্তান ছাড়ার কথা ছিল ৩১ অগাস্ট। কিন্তু বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সরানো নিয়ে সেখানে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময় অবশ্য তালিবানদের তরফে বারবার সময়সীমা মানার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল আমেরিকাকে। তবে আমেরিকার আফগানিস্তান ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ছেড়ে গেল হাজারো আফগানকে যাঁরা গত ২০ বছর ধরে আমেরিকাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০ বছর আফগানিস্তানে কাটাল মার্কিন সেনা। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকাও তাদের দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধ শেষ করল ৩০ অগাস্ট।
এদিকে আমেরিকার C-17 বিমান কাবুল বিমানবন্দর ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তান জুড়ে উত্সব শুরু হয়ে যায়। উত্সব পালন করে তালিবানরা। কোথাও বাজি পুড়িয়ে আবার কোথাও শূন্যে গুলি চালিয়ে তালিবানরা উত্সব পালন করে। তালিবানদের মুখপাত্র কারি ইউসুফ বলেছেন, আমেরিকার শেষ সেনা কাবুল বিমানবন্দর ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দেশ পুরোপুরি স্বাধীনতা পেল।
এদিকে সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ হওয়ার পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তাদের দেশের সেনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আফগানিস্তানে তাদের সেনার ২০ বছরের উপস্থিতি শেষ হয়েছে। পাশাপাশি যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজ চালিয়েছে সেনা, তার জন্যও তিনি দেশের সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি বলছেন, এবার যাঁরা আফগানিস্তান ছাড়তে চান, তাদের জন্য ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তালিবানদের।
তবে যেভাবে আফগান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন, বাইডেন, তার সমালোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান, সবাই। বিশেষ করে তালিবানদের কাবুল দখল করার পর থেকে। আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, C-17 বিমানে শেষ আফগানিস্তান ছেড়েছেন, আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রধান রাষ্ট্রদূত। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, আফগানিস্তানে আর কোনও সেনা নেই।
তালিবানরা ১৫ অগাস্ট কাবুল দখল করে। তবে তার আগের দিন অর্থাত্ ১৪ অগাস্ট থেকেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আফগানিস্তান থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় ১,২২,০০০ মানুষকে সেদেশ থেকে সরানো হয়েছে। ২০ টি দেশের নাগরিকদের বিমানে করে সরানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে গত শুক্রবার। তবে মার্কিন সেনা যে ৩১ অগাস্ট আফগানিস্তান ছাড়বে, তা ঠিক করে গিয়েছিলেন আমেরিকার পূর্বতন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত দু সপ্তাহ ধরে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন, সেদেশ থেকে পালিয়ে যেতে। এর মধ্যে বহু আফগান নাগরিকও ছিলেন।
তবে উদ্ধার কাজ কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন গত বৃহস্পতিবার আইএস-এর আত্মঘাতী বাহিনীর হামলায় আমেরিকার ১৩ সেনার প্রাণ যায়। সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবশ্য বলেছিলেন, হামলায় যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর আমেরিকার তরফে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল। সোমবার আমেরিকার বাহিনী কাবুল ছাড়ার আগে অবশ্য সেখানে অন্তত পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। যদিও আমেরিকার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তা আটকে দেয়।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রায় পুরো আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালিবানরা। তাদের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে গত শতাব্দীর শেষ দশকের তালিবানদের সঙ্গে তাদের মেলানো ভুল হবে। ইতিমধ্যেই তারা ভারতের সঙ্গে বানিজ্য-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বানও জানিয়ে রেখেছে। তবে রাষ্ট্রসংঘের তরফে বলা হয়েছে এবছর শেষের আগেই আফগানিস্তান থেকে পালাতে পারেন সেদেশের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ।