কয়েকটি মাঝারি আকারের আগ্নেয়গিরিই গোটা পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারে। ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর সুনামি। বন্ধ করে দিতে পারে বিশ্ববাণিজ্যের প্রধান জলপথ। গভীর সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়া টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার যাবতীয় লাইন ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশন্স’ পত্রিকায়।
এই গবেষণায় মাঝারি বা ছোট আগ্লেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতই (volcanic eruptions) ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, পৃথিবীর এমন মোট সাতটি জায়গাকে (পিঞ্চ পয়েন্ট) চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তাঁরা বলছেন, আকারে ছোট হলেও ওই এলাকাগুলিতে রয়েছে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অনেকগুলি ‘ক্লাস্টার’। সেই ‘ক্লাস্টার’গুলি রয়েছে তাইওয়ান-সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি বড় অংশে, উত্তর আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগর, উত্তর-পশ্চিম আমেরিকা, অতলান্তিক মহাসাগরের উত্তর দিকের দেশগুলিতে।
University of Cambridge-এর গবেষক, Global Risk Researcher Lara Mani এই গবেষণার প্রধান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি, এই সাতটি এলাকার যে কোনও একটিতে মাঝারি আকারের কোনও আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে যে পরিমাণ কম্পনের (tremors) জন্ম হবে, বের হবে যে পরিমাণ কাদাস্রোত, নামবে যে পরিমাণ ভূমিধস, তা গোটা বিশ্বের যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করার পক্ষে যথেষ্ট। এর ফলে গভীর সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়া টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তছনছ হতে পারে। নষ্ট হতে পারে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ।’
আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভের সংজ্ঞা অনুযায়ী তাকেই ‘সুপার ভলক্যানো’ (supervolcanic eruption) বলা হয়, যখন কোনও আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের মাত্রা, যাকে ‘Volcanic Explosivity Index’ (VEI) দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, তা ৮ মাত্রার হয়। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এমন ঘটনা বিরল। প্রতি ১ লক্ষ বছরে মাত্র একবার হয়তো এমন ঘটে। আর মাঝারি আকারের আগ্নেয়গিরিগুলির যে বিস্ফোরণগুলি হয়ে থাকে তার মাত্রা ৭ বা ৮-এ সাধারণত পৌঁছয়ই না। সেগুলি ৬-এর মধ্যেই থাকে। তবুও সেই মাত্রার বিস্ফোরণের পরেও বিশ্বের প্রাকৃতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে।